প্রশ্নোত্তর
কোন রাষ্ট্রের প্রকৃতি, জনগণ ও রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক, রাষ্ট্রের অঙ্গসমূহ, তাদের কার্যাবলি, তাদের মধ্যে সম্পর্ক, নির্বাচন ইত্যাদি বিষয় সংবলিত দলিলই সংবিধান।
অর্থাৎ কোন রাষ্ট্র সম্পর্কিত সকল তথ্যের দলিল সংবিধান। এর মাধ্যমেই রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।
গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল এর মতে,
“সংবিধান হলো এমন এক জীবনপদ্ধতি যা রাষ্ট্র স্বয়ং বেছে নেয়।”
সংবিধান একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। সকল নাগরিকের সংবিধান মান্য করা ও তার রক্ষা করা পরম কর্তব্য।
স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংবিধানের নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান’। এটি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। এর মাধ্যমেই বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।
বাংলাদেশের সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ হচ্ছে:
১. এটি একটি লিখিত দলিল।
২. এটি প্রস্তাবনা দিয়ে শুরু ও তফসিল দিয়ে শেষ হয়েছে।
৩. এতে ১১টি ভাগ, ১৫৩টি অনুচ্ছেদ, ৭টি তফসিল রয়েছে।
৪. সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাম (সাংবিধানিক নাম )“গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ”।
৫. সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ।
৬. এই সংবিধানই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। এর সাধে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোন আইন প্রণয়ন করা যাবে না।
৭. সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে উল্লেখ করা হয়েছে।
৮. সংবিধানে নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগকে পৃথক করা হয়েছে।
৯. সংবিধানে আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে কতিপয় মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে মৌলিক অধিকার ভঙ্গ হলে আইনের আশ্রয় নেওয়া যাবে।
১০. সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে রাষ্ট্রপ্রধানরূপে সকল ব্যক্তির উর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয়েছে।
১১. সংবিধান বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বর্ণনা করেছে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের কোন অঙ্গরাজ্য থাকবে না। এক কক্ষবিশিষ্ট একটি আইনসভা থাকবে; যা ৩৫০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে।
১২. সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি বিদ্যমান থাকবে।
১৩. বাংলাদেশের সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয়। সংসদ সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে তা পরিবর্তন করা যাবে।
১৪. সংবিধানে বাংলা ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে বাংলা পাঠ গ্রহণযোগ্য হবে।
বাংলাদেশের সংবিধান এখনও পর্যন্ত ১৭ বার সংশোধন করা হয়েছে। বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তব প্রতিচ্ছবিরূপে এটি পৃথিবীর এক অনন্য দলিল।
বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হওয়ার সময়-
রাষ্ট্রপতি: আবু সাঈদ চৌধুরি
প্রধানমন্ত্রী: শেখ মুজিবুর রহমান
গণপরিষদের-
সংসদ সদস্য: ৪০৩ জন
প্রথম অধিবেশনের সভাপতি: মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ
প্রথম স্পিকার: শাহ আব্দুল হামিদ
প্রথম ডেপুটি স্পিকার: মোহাম্মদ উল্লাহ
বাংলাদেশ গণপরিষদের সংসদ নেতা: শেখ মুজিবুর রহমান
সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য: ৩৪ জন
সংবিধান প্রণেতা ও খসড়া সংবিধান কমিটির প্রধান: ড. কামাল হোসেন
আইন বিভাগের সদস্যদের নিয়ে গঠিত পরিষদকে আইন পরিষদ বলে।
বাংলাদেশের আইনসভার নাম জাতীয় সংসদ। জাতীয় সংসদের সদস্যদের নিয়ে আইন পরিষদ গঠিত হয়; যারা সাধারণত এম.পি. নামে পরিচিত হন। রাষ্ট্র পরিচালনার উদ্যেশ্যে আইন প্রণয়ন করাই এ বিভাগের কাজ।
অপরদিকে গণপরিষদের মূল কাজ হলো সংবিধান রচনা করা। তবে গণপরিষদ সংবিধানের অনুপস্থিতিতে আইন প্রণয়নও করে থাকে। সংবিধান রচিত হওয়ার পর গণপরিষদের কাজ শেষ হয়ে যায়। তখন আইন প্রণয়ন করে আইন পরিষদ।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের পর গণপরিষদকে কেবল সংবিধান রচনার দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে নয় মাসের মধ্যেই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য সংবিধান রচনার কাজ সমাপ্ত হয়। এ সময় রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ প্রণয়নের মাধ্যমে আইন তৈরি করেন যা রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যবহৃত হয়। তাই আইন বলতে অধ্যাদেশ, আদেশ, উপবিধি, নিয়ম, প্রনিয়ম, বিজ্ঞপ্তিকেও বোঝায়। পরবর্তীকালে ১ম তফসিলের মাধ্যমে এসব অধ্যাদেশকে সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।