ইতিহাসের উপাদান

ইতিহাসের উপাদান
ইতিহাসের উপাদান

ইতিহাসের উপাদান

যার উপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব তাদেরকে ইতিহাসের উপাদান বলা হয়।

 

ইতিহাসের উপাদান দুই প্রকার। যথা:

১. লিখিত উপাদান এবং

২. অলিখিত উপাদান।

এখানে কেবল বাংলার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ উপাদনগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো।

 

লিখিত উপাদান

সাহিত্য, ঐতিহাসিক বিবরণ, সরকারি নথি, চিঠিপ, দলিলপত্র ইত্যাদিকে ইতিহাসের লিখিত উপাদান হিসাবে ধরা হয়। এছাড়াও রয়েছে রুপকথা, কিংবদন্তি, গল্পকাহিনী ইত্যাদি।

 

সাহিত্য সমূহের মধ্যে রয়েছে-

  • বেদ

সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। খ্রি.পূ. ১৫০০ অব্দে আর্যরা ভারতবর্ষে প্রবেশের সময় সাথে করে নিয়ে আসেন। বেদ চারভাগে বিভক্ত। যথা: ঋকবেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ ও অথর্ববেদ।

 

  • কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র:

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের আমলে রচিত (খ্রি. পূ. ৩০০ অব্দের কাছাকছি সময়ে)। ১৫টি ভাগ বা অধিকরণে বিভক্ত গ্রন্থের মোট শ্লোক সংখ্যা ৬০০০। রাজ্যশাসন, শত্রুদমন, রাজস্ব, দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন, পৌর প্রশাসন প্রভৃতি নিয়ে এই ১৫টি বিভাগের প্রতিটি রচিত।

 

  • কলহনের রাজতরঙ্গিনী

দ্বাদশ শতাব্দীতে রচিত ৭,৮২৬টি শ্লোক (৮টি তরঙ্গে বিভক্ত) সংবলিত তদানিন্তর কাশ্মীরের সমাজ ইতিহাসের দলিল। বিভিন্ন রাজাদের ধারাবাহিক বর্ণনা করা হয়েছে।

 

  • ঐতরেয় আরণ্যক

মহিদাস রচিত এই গ্রন্থেই সর্বপ্রথম বঙ্গ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়।

 

  • আকবরনামা

আবুল ফজল কর্তৃক রচিত তিন খন্ডের বিশাল ইতিহাসগ্রন্থ আকবরনামা। ৩য় খন্ড আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে দেশবাচক বাংলা শব্দের ব্যবহার করা হয়। ‘বঙ্গ’ ও ‘আল’ মিলে ‘বাংলা’ শব্দ গঠিত হয়েছে। ‘বঙ্গ’ এদেশের প্রাচীন নাম; আর ‘আল’ মানে ‘বাধ’ বা ‘জমির সীমানাসূচক অংশ’।

 

  • রিয়াজ আস সালাতিন

গ্রন্থটি রচনা করেছেন গোলাম হোসেন সলিম।

 

  • তবকাত ই নাসিরী

মিনহাজ উস সিরাজ কর্তৃক ফরাসি ভাষায় রচিত এ গ্রন্থে বাংলায় মুসলিম শাসনের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস পাওয়া যায়।

 

 

বৈদেশিক বিবরণ সমূহের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন পর্যটকদের দেয়া কিছু বর্ণনা।

যেমন:

তিব্বতীয় লেখক লামা তারানাথের বর্ণনা থেকে পাল বংশের রাজা গোপালের সিংহাসন আরোহনের কাল্পনিক কাহিনী বর্ণিত আছে।

চৈনিক ইতিহাসের জনক সুমা কিয়েন সংকলিত ঐতিহাসিক দলিল। খ্রি. পূ. ৯৪ অব্দে রচিত এই গ্রন্থে কুষাণ সাম্রাজ্যের ইতিহাস পাওয়া যায়।

৫ম থেকে ৭ম শতকের চৈনিক পরিব্রাজক ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাং, ইংসিং এর বর্ণনা এবং পরবর্তীকালে আফ্রিকান পরিব্রাজক ইবনে বতুতার বর্ণনা থেকেও বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

পরিব্রাজকদের নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তাই এখানে আলোচনা করা হলো না।

 

 

অলিখিত উপাদান

বিভিন্ন বস্তু, উপাদান ইত্যাদি যেসব থেকে ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় তা ইতিহাসের অলিখিত উপাদান বলে বিবেচিত। যেমন: মুদ্রা, শিলালিপি, স্তম্ভলিপি, তাম্রলিপি, ইমারত ইত্যাদি।

  • তামার পাতের উপর লেখা: তাম্রলিপি।
  • তামার পাতে রাজাদের ঘোষণা বা নির্দেশ: তাম্রশাসন।

স্বাধীন বঙ্গ রাজ্য আমলে ৭টি তাম্রশাসন পাওয়া গেছে।

যেমন: সিন্ধু সভ্যতা, বাংলাদেশের মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, ময়নামতির প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন থেকে সেই অঞ্চলের মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বাংলাদেশের উয়ারী বটেশ্বরের প্রত্নতত্ত্ব প্রমাণ করে যে ২৫০০ সাল পূর্বেও বাংলায় নগর সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল।

সম্পর্কিত অনুচ্ছেদসমূহ