বিটা কণা
তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে যে উচ্চগতিসম্পন্ন ইলেকট্রন (β⁻) বা পজিট্রন (β⁺) নির্গত হয়, তাকে বিটা কণিকা বলে।
উদাহরণসরূপ কার্বন-১৪ (C-14), স্ট্রোনটিয়াম-৯০ (Sr-90) এবং ফসফরাস-৩২ (P-32) বিটা কণিকা নির্গত করে।
বিটা কণার ধরণ:
বিটা কণা দুই প্রকার হতে পারে। যথা:
১. বিটা ঋণাত্মক (β⁻): এটি একটি উচ্চগতিসম্পন্ন ইলেকট্রন, এটি যখন উৎপন্ন হয় তখন একটি নিউট্রন একটি প্রোটনে রূপান্তরিত হয়।
কার্বন-১৪ নাইট্রোজেন-১৪-এ রূপান্তরিত হয় এবং একটি ইলেকট্রন ও একটি অ্যান্টিনিউট্রিনো নির্গত হয়।
২. বিটা ধনাত্মক (β⁺): এটি একটি উচ্চগতিসম্পন্ন পজিট্রন, এটি যখন উৎপন্ন হয় তখন একটি প্রোটন একটি নিউট্রনে রূপান্তরিত হয়।
কার্বন-১১ বোরন-১১-এ রূপান্তরিত হয় এবং একটি পজিট্রন ও একটি নিউট্রিনো নির্গত হয়।
বিটা কণার বৈশিষ্ট্য:
১. গঠন: বিটা কণিকা মূলত উচ্চগতিসম্পন্ন ইলেকট্রন (β⁻) বা পজিট্রন (β⁺) কণা।
২. আধান: বিটা কণিকার চার্জ -1 (β⁻) বা +1 (β⁺)।
৩. ভর: এর ভর প্রোটনের তুলনায় অনেক কম (~1/1836amu)।
৪. গতি: এর গতি আলোর গতির ৫০-৯৯% হয়ে থাকে।
৫. প্রবেশ ক্ষমতা: বিটা কণার ভেদনযোগ্যতা আলফা কণার তুলনায় কম, কিন্তু গামার তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। এটি কাগজ ভেদ করতে পারে, কিন্তু পাতলা অ্যালুমিনিয়াম ভেদ করতে পারে না।
৬. আয়নীয়ন ক্ষমতা : বিটা কণার আয়নীয়ন ক্ষমতা আলফা কণার তুলনায় কম, কিন্তু গামার তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। ফলে এটি কোষের ক্ষতি করতে পারে।
বিটা কণার ব্যবহার:
১. চিকিৎসা ও থেরাপি
ক্যান্সার চিকিৎসা: স্ট্রোনটিয়াম-৯০ (Sr-90) এবং ফসফরাস-৩২ (P-32) ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়।
রেডিওথেরাপি: ইট্রিয়াম-৯০ (Y-90) ব্রেইন টিউমার এবং লিম্ফোমার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
২. শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার
ধাতুর পুরুত্ব পরিমাপ: বিটা বিকিরণ ব্যবহার করে কাগজ, প্লাস্টিক, এবং ধাতুর পুরুত্ব নির্ধারণ করা হয়।
নিউক্লিয়ার ব্যাটারি: ট্রিটিয়াম (H-3) এবং স্ট্রোনটিয়াম-৯০ (Sr-90) দ্বারা বিটাভোলটাইক ব্যাটারি তৈরি হয়, যা মহাকাশযানে ব্যবহৃত হয়।
৩. গবেষণা ও রেডিওকার্বন ডেটিং
রেডিওকার্বন ডেটিং: কার্বন-১৪ (C-14) ব্যবহার করে প্রাচীন জীবাশ্ম ও প্রত্নতাত্ত্বিক নমুনার বয়স নির্ধারণ করা হয়।
বিটা কণার ক্ষতিকর প্রভাব:
১. বাহ্যিক প্রভাব: বিটা কণা ত্বক ভেদ করতে পারে, তাই এটি বাহ্যিকভাবে বেশি ক্ষতিকর। উচ্চশক্তির বিটা বিকিরণ ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে।
২. অভ্যন্তরীণ প্রভাব: যদি বিটা নির্গমনকারী পদার্থ শরীরে প্রবেশ করে (শ্বাস, খাবার বা পানির মাধ্যমে); তবে এটি ডিএনএ মিউটেশন এবং ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
৩. রেডিও সিকনেস: উচ্চ মাত্রার বিটা বিকিরণ এক্সপোজারে বমি, ক্লান্তি ও অঙ্গহানি ঘটতে পারে।