রাষ্ট্রধর্ম

রাষ্ট্রধর্ম
রাষ্ট্রধর্ম

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান

 

অনুচ্ছেদ ০২ ক

রাষ্ট্রধর্ম

প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করবে।

 

২ক নং অনুচ্ছেদটি ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে ছিল না। অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে।

 

ধর্মরিপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম:

ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে। তা হলো,

“ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্ম হীনতা নয়।”

 

অর্থাৎ প্রত্যেকে তার ধর্ম পালন করবে। হিন্দু তার ধর্ম পালন করবে, মুসলিম তার ধর্ম পালন করবে, খ্রিষ্টান তার ধর্ম পালন করবে ইত্যাদি। তবে কেউ কারো ধর্ম পালনে হস্তক্ষেপ করবে না। রাষ্ট্র প্রত্যেককে তার ধর্ম পালনে সমমর্যাদা ও সমঅধিকার প্রদান করবে। এটাই ধর্মনিরপেক্ষতা।

 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রস্তাবনায় সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে গ্রহণ করা হয়েছে।

অনুচ্ছেদ ৮-এ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়েছে।

অনুচ্ছেদ ১২-এ সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতা বিলোপ করা হয়েছে। ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা প্রদান ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশেষ ধর্ম পালনকারীর উপর কোন প্রকার বৈষম্য ও নিপীড়ন না করার কথা বলা হয়েছে।

অনুচ্ছেদ ২৭-এ বলা হয়েছে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান।

অনুচ্ছেদ ৪১-এ ধমীয় স্বাধীনতা প্রদান করে বলা হয়েছে অন্য ধর্মে আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে বাধ্য করা যাবে না।

অর্থাৎ এসব অনুচ্ছেদ নিশ্চিতরূপে বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রমাণ তুলে ধরে।

 

অন্যদিকে রাষ্ট্রধর্ম বলতে রাষ্ট্রের কার্যকলাপে কোন বিশেষ ধর্মের প্রতিফলনকে বোঝায়। অষ্টম সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে স্বীকৃতি দিয়ে ২ক অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়। এর পেছনে মূল কারণ রাষ্ট্রকে ইসলামীকীকরণ ছিল না। তৎকালীন সামরিক শাসক হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে জনপ্রিয়তা লাভের একটা চেষ্টা ছিল মাত্র।

 

বাহাত্তরের সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিন্তু পঞ্চম সংশোধনীতে ধর্মনিরপেক্ষতার স্থলে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস’ শব্দগুচ্ছ যুক্ত করা হয় যা স্পষ্টরূপে মূল সংবিধানের বিচ্যুতি।

পরবর্তীতে পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আবার ধর্মরিপেক্ষতার নীতিতে ফিরে যাওয়া হয়। তবে রাষ্ট্রধর্ম অনুচ্ছেদটি বিলুপ্ত না করে উপরে উল্লিখিত উপায়ে প্রতিস্থাপন করা হয় যা নিয়ে এখনও বিতর্ক চলমান।

সম্পর্কিত অনুচ্ছেদসমূহ