বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে সংবিধান সংশোধন

বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে সংবিধান সংশোধন
বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে সংবিধান সংশোধন

বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে সংবিধান সংশোধন

প্রথম চারটি সংশোধনী শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে শ্রী মনোরঞ্জন ধর উত্থাপন করেন।

 

প্রথম সংশোধনী:

সংবিধান আইন, ১৯৭৩।

বাংলাদেশের প্রথম আইনমন্ত্রী শ্রী মনোরঞ্জন ধর সংশোধনী বিল উত্থাপন করেন।

১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই গৃহীত হয় ও রাষ্ট্রপতির সম্মতি পায়।

 

৪৭ অনুচ্ছেদে একটি অতিরিক্ত দফা (৩ নং) যোগ করা হয়।

৪৭ক অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়।

 

এই সংশোধনী গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইনে অন্যান্য অপরাধের দায়ে যে কোন ব্যক্তির বিচার ও শাস্তি অনুমোদন করে।

 

দ্বিতীয় সংশোধনী:

সংবিধান আইন, ১৯৭৩।

বাংলাদেশের প্রথম আইনমন্ত্রী শ্রী মনোরঞ্জন ধর সংশোধনী বিল উত্থাপন করেন।

১৯৭৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গৃহীত হয় ও ২২ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির সম্মতি পায়।

 

এই সংশোধনীতে বিশেষ অবস্থায় তথা বহিরাক্রমণ, অভ্যন্তরীণ গলযোগ ইত্যাদির সময় রাষ্ট্রপতিকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার ক্ষমতা দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য জরুরি অবস্থাকালীন নাগরিকদের কিছু মৌলিক অধিকার স্থগিত করা হয়।

 

তৃতীয় সংশোধনী:

সংবিধান আইন, ১৯৭৪।

বাংলাদেশের প্রথম আইনমন্ত্রী শ্রী মনোরঞ্জন ধর সংশোধনী বিল উত্থাপন করেন।

১৯৭৪ সালের ২৩ নভেম্বর গৃহীত হয়।

 

ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত চুক্তি, ১৯৭৪ কার্যকর করার লক্ষ্যে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয়। পরবর্তীতে বেরুবাড়ী ভারতকে হস্তান্তর করে দহগ্রাম বাংলাদেশের সাথে যুক্ত করা হয়।

 

চতুর্থ সংশোধনী:

বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয় দলীয় নেতাদের দুর্নীতির কারণে। ১৯৭৪ সালের ২৮শে ডিসেম্বর জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। ফলে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লব ঘটাতে এই সংশোধনী নিয়ে আসেন।

 

সংবিধান আইন, ১৯৭৫।

বাংলাদেশের প্রথম আইনমন্ত্রী শ্রী মনোরঞ্জন ধর সংশোধনী বিল উত্থাপন করেন।

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি গৃহীত হয়।

 

এ সংশোধনীতে-

  • সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল।
  • বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থলে আনা হয় একদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা। দেশের সব কয়টি রাজনৈতিক দলের বিলুপ্তি ঘটিয়ে একটি জাতীয় প্লাটফর্ম হিসাবে বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠা করা হয়।
  • তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আজীবন প্রেসিডেন্ট পদে থাকার বিধান প্রবর্তন করা হয়েছিল।
  • সকল বিচারপতির নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়েছিল।
  • বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংকুচিত করা হয়েছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার বলবৎ করার যে অধিকার বিচার বিভাগের ছিল তা রদ করা হয়েছিল।
  • সরকারের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপ-রাষ্ট্রপতির পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতিকে উপরাষ্ট্রপতি নিয়োগের ও অপসারণের ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছিল।
  • রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণে বাধ্য থাকবেন না বলে বিধান করা হয়েছিল।
  • ২৫ জানুয়ারি, ১৯৭৫ হতে সংসদের মেয়াদ আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছিল।
  • রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসনের পদ্ধতি আরও জটিল করা হয়েছিল।

 

মোটকথা হলো এই সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে তথা বঙ্গবন্ধুকে অসীম ক্ষমতাধর বানিয়ে আজীবন রেখে দেওয়ার বিধান করা হয়েছিল। ওসমানীসহ অনেক নেতা এ সংশোধনীর প্রতিক্রিয়ায় সংসদ বর্জন করেন। তাই বিল নিয়ে সংসদে কোন আলোচনাও করা হয়নি। বিরোধী দলগুলো একে স্বৈরাচারী, অগণতান্ত্রিক ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের নিপীড়ন করার কৌশল বলে সমালোচনা করেন।

সম্পর্কিত অনুচ্ছেদসমূহ