জাতীয়তাবাদ

জাতীয়তাবাদ
জাতীয়তাবাদ

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান

 

অনুচ্ছেদ ০৯

জাতীয়তাবাদ

ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালী জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।

 

জাতীয়তা, জাতি ও জাতীয়তাবাদ:

জাতীয়তা একটি মানসিক ধারণা; যার কারণে একদল ব্যক্তি তাদের ভাষা, চিন্তা, প্রথা, সংস্কৃতি, নৃতাত্ত্বিক গঠন, অঞ্চল ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেদের অন্য জনসমাজ থেকে আলাদা ভাবে এবং নিজেদের মধ্যে ঐক্যবোধ তৈরি করে।

আর ঐ একদল ব্যক্তিকে বলা হয় জাতি।

 

অর্থাৎ জাতীয়তা থেকেই জাতির উদ্ভব হয়।

 

জাতীয়তাবাদ একটি আদর্শ যেখানে জাতিকে মানব সমাজের কেন্দ্রীয় অবস্থানে স্থাপন করা হয় এবং অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শকে জাতিগত আদর্শের পরে স্থান দেওয়া হয়। জাতীয়তাবাদ একটি জাতির সংস্কৃতি রক্ষার্থে ভূমিকা পালন করে এবং জাতির অর্জনসমূহকে সামনে তুলে ধরে।

 

সাধারণত কোন ঔপনিবেশিক শাসনের বিরূদ্ধে এরূপ চেতনার উদ্ভব হয়।

একটি রাষ্ট্রে একাধিক জাতি থাকতে পারে (ভারত)। আবার একটি জাতি একাধিক রাষ্ট্রে থাকতে পারে (বাঙালি জাতি ভারতেও আছে)। তবে যদি কোন একটি জাতি সার্বভৌম ক্ষমতা লাভ করে রাষ্ট্র গঠন করে তবে তাকে জাতিরাষ্ট্র বলে। যেমন: ইসরায়েল।

 

জাতীয়তা বনাম জাতীয়তাবাদ:

জাতীয়তা হলো একটি জাতির সাথে একজন ব্যক্তির সম্পর্ক। আর জাতীয়তাবাদ হলো একটি বিস্তৃত মতাদর্শ যা সেই জাতির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যের পক্ষে।

জাতীয়তা ধারণা মাধ্যমে ব্যক্তি আলাদা হয় আর জাতীয়তাবাদ তাকে সেই জাতিকে শোষণের হাত থেকে রক্ষা করে শীর্ষে নেওয়ার মানসিকতা সৃষ্টি করে।

 

 

বাংলাদেশ রাষ্ট্রে জাতি ও জাতীয়তাবোধ:

বাংলাদেশের মানুষ জাতি হিসেবে বাঙালি নামে পরিচিত।

তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাঙালি জাতি রয়েছে।

এ জাতি ভাষাগত ঐক্যের কারণে সৃষ্টি হয়েছে।

বাঙালি জাতীয়তাবোধ তৈরি হয় মূলত ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ এই বোধকে আরও দৃঢ় করে এবং পূর্ণতা পায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। আর তার ফল মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র।

অর্থাৎ সংক্ষেপে বললে বাঙালি জাতীয়তাবাদই বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের কারণ।

 

উগ্র-জাতীয়তাবাদ:

কোন জাতি নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভেবে অন্যদের শোষণে লিপ্ত হলে তাকে উগ্র জাতীয়তাবাদ বলে। হিটলার, মুসোলিনি, হিরোহিতের উগ্র জাতীয়তাবাদের ফলেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়।

 

আন্তর্জাতিকতাবাদ:

বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগ জাতীয়তাবাদের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বগ্রামের ধারণা দিয়েছে। একজন ব্যক্তি মুহূর্তেই বিশ্বের যে কোনো মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। তাই জাতীয়তাবাদ ধারণা লুপ্ত হয়ে বিশ্ব এখন আন্তর্জাতিকতাবাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

সম্পর্কিত অনুচ্ছেদসমূহ