বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা

জাতীয় পতাকা
জাতীয় পতাকা

জাতীয় পতাকা:

প্রতিটি রাষ্ট্রের নিজস্ব প্রতীক-স্বরূপ, জাতীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত স্বতন্ত্র পতাকাকে বলা হয় জাতীয় পতাকা।

 

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা:

১৯৭২ সালের পতাকা বিধি অনুসারে,

১. বাংলাদেশের পতাকা হবে আয়তাকার।

২. এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত হবে ১০:৬।

৩. পতাকায় গাঢ় সবুজ রঙের জমিনের মাঝখানে একটি লাল বৃত্ত থাকবে।

৪. বৃত্তটির ব্যাসার্ধ হবে দৈর্ঘ্য-এর এক-পঞ্চমাংশ।

৫. বৃত্তের কেন্দ্র হবে দৈর্ঘে্যর ৯/২০ অংশ থেকে টানা লম্বের এবং প্রস্থের মাঝখান দিয়ে টানা আনুভূমিক রেখার ছেদবিন্দুতে।

 

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা

 

তবে ভবন, মোটরগাড়ি, আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক অনুষ্ঠানের জন্য আলাদা মাপ রয়েছে।

 

সবুজ ও লাল রং ব্যবহার করার অর্থ:

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় ব্যবহৃত সবুজ রং বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক আর লাল রং উদীয়মান সূর্য, স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের রক্তের প্রতীক।

 

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ইতিহাস:

পাকিস্তানি আমলে যখন বাঙালিরা স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল তখন নির্মিত হয়েছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পতাকা। ১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের (তৎকালীন ইকবাল হল) ১১৬ (বর্তমান ১১৭-১১৮) নং কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা আ. স. ম. আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমেদসহ আরও অনেক নেতাকর্মী মিলে সবুজ জমিনের উপর লাল বৃত্তের পতাকা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। আর ছাত্রনেতা শিব নারায়ণ দাস লাল বৃত্তের মাঝখানে বাংলাদেশের মানচিত্রটি ফুটিয়ে তোলেন।

১৯৭১ সালের ২রা মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত হবার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক বিশাল সমাবেশ হয়। এ সমাবেশেই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ছাত্রনেতা আ. স. ম. আবদুর রব জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ২৩শে মার্চ ‘পাকিস্তান দিবসে’ সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার পরিবর্তে শিব নারায়ন দাসের নকশা করা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার শিব নারায়ন দাসের নকশাকৃত পতাকার মাঝে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রঙ, ও তার ব্যাখ্যা সংবলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলেন পটূয়া কামরুল হাসানকে। ১২ই জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের পতাকা থেকে মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলা হয়। পতাকার উভয় পাশে সঠিকভাবে মানচিত্রটি ফুটিয়ে তোলার অসুবিধা পতাকা থেকে মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলার অন্যতম কারণ। কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপটিই ১৯৭২ সালের ১৭ই জানুয়ারি সরকারিভাবে গৃহীত হয়। এটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

 

জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার নিয়ম

বিশেষ ক্ষেত্রে (সাধারণত ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসসহ জাতীয়ভাবে শোক পালনের দিন) জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা যায়। সেক্ষেত্রে নিয়ম:

  • পতাকা প্রথমে পতাকাদণ্ডের সর্বোচ্চ চূড়া পর্যন্ত উত্তোলন করতে হবে। এরপর পতাকা দণ্ডের এক-চতুর্থাংশের দৈর্ঘ্যের সমান নিচে নামিয়ে পতাকাটি স্থাপন করতে হবে।
  • পতাকা নামানোর সময় আবার পতাকা দণ্ডের সর্বোচ্চ চূড়া পর্যন্ত তুলে এরপর নামাতে হবে।

সম্পর্কিত অনুচ্ছেদসমূহ