পৃথিবী! আমাদের বাসস্থান। কেবল আমরা নই; সকল জীবের বাসস্থান। এখনও পর্যন্ত আমাদের জানা একমাত্র স্থান যেখানে জীবন ধারণের উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। এই পর্বে পৃথিবীর জন্ম কীভাবে হয়েছে এবং কীভাবে বর্তমান অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে ।
……
পৃথিবীর অবস্থান
পৃথিবী সৌরজগতের ৮টি গ্রহের মধ্যে একটি। গোলাকার এই গ্রহটি সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহ; যা সৌরজগতের তুলনায় অত্যন্ত ছোট। এই সৌরজগৎ আবার আকাশগঙ্গা ছায়াপথের অংশ। আকাশগঙ্গা ছায়াপথ লোকাল গ্রুপ অফ গ্যালাক্সির অংশ। এভাবে চলতেই থাকবে। সুবিশাল এই মহাবিশ্বে পৃথিবীর অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে “মহাবিশ্বে পৃথিবীর অবস্থান” এই অনুচ্ছেদটি পড়তে পারেন।
পৃথিবীর জন্ম
আনুমানিক ৪৬০ কোটি বছর পূর্বে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও অন্যান্য ভারী মৌল দ্বারা গঠিত একটি বিশাল গ্যাস ও ধূলিকণার মেঘ মহাকাশে ঘূর্ণায়মান ছিল। এক সময় এটি সংকুচিত হতে শুরু করে এবং একটি ঘূর্ণায়মান ডিস্কের মতো আকার ধারণ করে। যা পরিবর্তীত হয়ে সৌরজগতের সৃষ্টি হয়। ডিস্কের মাঝখানে ভারী অংশটি সূর্যে রূপান্তরিত হয় আর বাইরের দিকে সৃষ্টি হয় গ্রহ-উপগ্রহগুলো। এদের মধ্যেই একটি আমদের পৃথিবী। আনুমানিক ৪৫৪ কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীর জন্ম হয়েছিল।
জন্মের কিছু সময় পর ‘থিয়া’ নামক একটি বস্তুর সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষ হয়। ফলে পৃথিবীর কিছু অংশ ছিটকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু পৃথিবীর আকর্ষণ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারে না। পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে থাকে। আজ এটিকেই আমরা চাঁদ বলে ডাকি। চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ।
প্রাথমিক অবস্থা ও পরিবর্তন
জন্মানোর সময় পৃথিবী ছিল একটি উত্তপ্ত গোলাকার পিন্ড। সময়ের সাথে সাথে গ্রহাণুর সংঘর্ষ ও তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ফলে ধীরে ধীরে এটি ঠান্ডা হতে থাকে। ভারী কণাসমূহ ভেতরের দিকে পৃথিবীর কেন্দ্র গঠন করে। আর তুলনামূলক হালকা কণাসমূহ বাইরের দিকে ভূত্বক গঠন করে। পৃথিবীর কেন্দ্র এখনও উত্তপ্ত অবস্থাতেই আছে। কিন্তু সময়ের সাথে বাইরের দিকে ভূত্বকের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে; যার ফসল পৃথিবীর বর্তমান রূপ। তবে হঠাৎ করে এই পরিবর্তন হয়নি।
মহাসাগর ও বায়ুমন্ডলের সৃষ্টি
শুরুর দিকে অর্থাৎ যখন পৃথিবীর বাইরের দিক শীতল ও ঠান্ডা হওয়া শুরু করে তখন হালকা গ্যাস ও জলীয়বাষ্প কেন্দ্র থেকে বাইরে আসতে শুরু করে। শীতল তাপমাত্রার কারণে জলীয়বাষ্প পানিরূপে পৃথিবীপৃষ্ঠে জমা হয়। পাশাপাশি গ্রহাণুগুলোর নিজেদের সাথে নিয়ে আসা বরফও পৃথিবীপৃষ্ঠে জমা হতে থাকে। যা একসময় মহাসাগরের সৃষ্টি করে।
আর অন্যান্য হালকা গ্যাস ভারী গ্যসমূহের সাথে মিশে তৈরি করে স্থায়ী বায়ুমন্ডল। পৃথিবীর আকর্ষণ বলের কারণে এই বায়ুমন্ডল পৃথিবীকে ছেড়ে যেতে পারে না। পৃথিবীর চারদিকে পৃথিবীকে বেষ্টন করে সূর্যকে পরিক্রমা করে।
প্রাণের সৃষ্টি ও বিবর্তন
অধিকাংশ বিজ্ঞানীর মতে,
- মহাসাগরের পানি;
- বায়ুমন্ডলের মিথেন, অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন ইত্যাদি গ্যাস এবং
- বজ্রপাত, সৌর বিকিরণ ও আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ইত্যাদির কারণে এমন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয় যেখানে মহাসাগরের পানিতে অ্যামাইনো এসিড উৎপন্ন হওয়া সম্ভব ছিল।
বিজ্ঞানীদের অনুমান এই অ্যামাইনো এসিডই জীবনের প্রথম অণু। অর্থাৎ মহাসাগর ও বায়ুমন্ডল সৃষ্টি পৃথিবীকে জীবন ধারণের একটি উপযুক্ত স্থান বানিয়ে তোলে। যার ফলসরূপ আনুমানিক ৩৮০ কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীর মহাসাগরে প্রথম প্রাণের সৃষ্টি হয়। তবে প্রাণের সৃষ্টি নিয়ে বিতর্ক এখনও শেষ হয়নি। প্রথম প্রাণের সৃষ্টি নিয়ে আরও কিছু মতবাদ বিজ্ঞান মহলে প্রচলিত আছে।
যা হউক এই এককোষী প্রাণ পরবর্তীতে প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য বিবর্তিত হয়ে বহুকোষী প্রাণের সৃষ্টি করেছে। জল থেকে উঠে এসে স্থলে বংশবৃদ্ধি করেছে। বায়ুমন্ডলে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়েছে। জন্ম দিয়েছে উদ্ভিদ, প্রাণীসহ অসংখ্য জটিল জীবের। “বিবর্তনের ইতিহাস” অধ্যায়ে এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
মানুষের জন্ম
আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ লক্ষ বছর পূর্বে পৃথিবীতে মানুষ গণের জন্ম হয়েছিল। আর আমাদের তথা আধুনিক মানুষের জন্ম হয়েছিল প্রায় ২ লক্ষ বছর আগের কোন একটা সময়ে। “মানুষের ইতিহাস” শিরোনামে আলাদা অধ্যায় তৈরি করে মানব বিবর্তন ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
বর্তমান অবস্থা
বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ৮৭ লক্ষ প্রজাতির জীব রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। তবে নিঃসন্দেহে একটি মাত্র প্রজাতি, মানুষ পৃথিবীতে রাজত্ব করছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির কারণে এখন আর আমাদের প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না। মানুষ চাইলেই মাটির নিচ থেকে জল তুলে তৃষ্ণা মেটাতে পারে, রাতে আলোর ব্যবস্থা করতে পারে। এমনকি মানুষ এখন বিবর্তনকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অদূর ভবিষ্যতে হয়ত মানুষের ক্ষমতা এমন এক পর্যায়ে চলে যাবে যে মানুষের দ্বারা অসম্ভব আর কোনো কাজই থাকবে না।
ভবিষ্যৎ
এটা স্পষ্ট যে মানবসৃষ্ট দূষণে জলবায়ুর পরিবর্তন জীববৈচিত্র্র্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। আধুনিক অস্ত্র পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব রক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জয়জয়কারই আমাদের তথা জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মূল কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
শেষকথা
ডায়নোসরেরা পৃথিবীতে প্রায় ১৬ কোটি বছর রাজত্ব করেছিল। প্রাকৃতিক কারণে তারা এখন বিলুপ্ত। যদি মানুষ তাদের আচরণে পরিবর্তন না আনে তবে নিশ্চিতরূপে পৃথিবীতে মানুষের রাজত্ব আর বেশি দিন টিকবে না। তাই আমাদের উচিত পরিবেশ দূষণ না করা। কারণ দিন শেষে এই প্রকৃতির কারণেই জীবকুল বেঁচে আছে। প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে আমরাও বেশিদিন টিকে থাকতে পারব না। বাকি থাকল অস্ত্রের কথা। এটা তো বিশ্ব মোড়লদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে!!!