গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান
অনুচ্ছেদ ০১
প্রজাতন্ত্র
বাংলাদেশ একটি একক স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র, যাহা “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” নামে পরিচিত হইবে।
স্বাধীন রাষ্ট্র:
কোন একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী যদি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সরকার গঠন করে এবং সেই সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে, তবে তাকে বলে রাষ্ট্র।
স্বাধীন রাষ্ট্র হতে চাইলে নির্দিষ্ট ভূখন্ড, জনসমষ্টি, সরকার এর সাথে আর একটি উপাদান থাকতে হয়, যাকে বলা হয় সার্বভৌমত্ব।
অর্থাৎ স্বাধীন রাষ্ট্রের উপাদান চারটি। যথা:
১. নির্দিষ্ট ভূখন্ড
২. জনসমষ্টি
৩. সরকার
৪. সার্বভৌমত্ব
উল্লেখ্য, দেশ আর রাষ্ট্র এক কথা নয়। দেশ বলতে সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের যে ভূখন্ডটি রয়েছে তাকে বোঝায়।
সার্বভৌমত্ব:
কোন রাষ্ট্রের নিজের সিদ্ধান্ত নিজের নেওয়ার যে ক্ষমতা, তাকে বলা হয় সার্বভৌমত্ব।
সার্বভৌম ক্ষমতার রূপ:
স্বাধীন রাষ্ট্র হতে চাইলে রাষ্ট্রের অবশ্যই সার্বভৌম ক্ষমতা থাকতে হবে। এর দুটি রূপ:
১. অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব এবং
২. বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব।
অভ্যন্তরীণ সার্বভৌম ক্ষমতার বলে রাষ্ট্র তার অভ্যন্তরে যে কোন প্রকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। আর বাহ্যিক সার্বভৌম ক্ষমতার বলে রাষ্টকে অন্য কোন রাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করতে পারে না, আক্রমণ করতে পারে না। একে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির সাথে তুলনা করা যায়।
সার্বভৌম ক্ষমতার বৈশিষ্ট্য:
১৬৪৮ সালে ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তির মাধ্যমে সার্বভৌমত্ব ধারণার উদ্ভব হয়। এর বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো:
১. সার্বভৌম ক্ষমতা লাভ করার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রয়োজন।
২. রাষ্ট্র ছোট বা বড় যাই হউক না কেন সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সবাই সমান।
৩. এই ক্ষমতা হস্তান্তরযোগ্য নয়।
গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র:
রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা কেমন হবে তার উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রকে অনেকভাবে ভাগ করা যায়।
যেমন:
একনায়কতন্ত্র (একজন ব্যক্তি তার ইচ্ছেমতো রাষ্ট্র শাসন করে),
অভিজাততন্ত্র (অভিজাত শ্রেণিরা রাষ্ট্র শাসন করে),
গোষ্ঠীতন্ত্র (কোন একটি গোষ্ঠী দ্বারা রাষ্ট্র শাসিত হয়),
প্রজাতন্ত্র, গণতন্ত্র ইত্যাদি।
প্রজাতন্ত্র বা সাধারণতন্ত্র:
প্রজাতন্ত্র বলতে এমন এক শাসন ব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে-
১. রাষ্ট্রপ্রধান পরোক্ষভাবে জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হয়;
২. রাজতন্ত্র (রাজার ছেলে পরে রাজা হবে) সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত থাকে।
এখানে পরোক্ষভাবে জনগণ দ্বারা নির্বাচিত সরকার বলতে বোঝানো হয়, জনগণ প্রথমে প্রত্যক্ষ ভোটে প্রতিনিধ নির্বাচন করবে। তারপর সেই প্রতিনিধিরা তাদের ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত করবে।
গণতন্ত্র:
গণতন্ত্র বলতে এমন এক শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে-
১. জনগণ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়
২. রাষ্ট্রপ্রধান প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হয়;
গণতন্ত্র নিয়ে আমেরিকার বিখ্যাত প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের গেটিসবার্গ ভাষণের কথা স্মরণ করা যায়। তার মতে,
“গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত, জনগণের সরকার। ”
বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় গণতন্ত্র হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট শাসনব্যবস্থা। কোন দেশে গণতন্ত্র আছে কি না তা পাঁচটি মানদন্ড দ্বারা পরিমাপ করা যায়। যথা:
১. নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচন
২. প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা
৩. ধর্ম নিরপেক্ষতা
৪. বহুত্ববাদ এবং
৫. সংবিধানের প্রতি আনুগত্য।
গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র বা সাধারণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য:
প্রজাতন্ত্র ও গণতন্ত্র প্রায় একই রকম হলেও তাদের মধ্যে সামন্য একটু পার্থক্য রয়েছে। যেমন:
১. গণতন্ত্রে জনগণ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সরকার জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য। কিন্তু প্রজাতন্ত্র এতটা উদার নয়। প্রজাতন্ত্রে ক্ষমতা থাকে প্রতিনিধিদের হাতে।
২. গণতন্ত্রে জনগণের ইচ্ছানুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। প্রজাতন্ত্রে রাষ্ট্র পরিচালিত হয় সংবিধান অনুযায়ী।
গণপ্রজাতন্ত্র:
গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্রে মূল বিষয়ে তেমন কোন পার্থক্য না থাকায় অধিকাংশ প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রই গণতন্ত্রী। এসব রাষ্ট্রকে বলা গয় গণপ্রজাতন্ত্র।
বাংলাদেশে, ভারত এসব দেশে গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র দুটোই রয়েছে। চীনে কেবল প্রজাতন্ত্র এবং যুক্তরাজ্যে কেবল গণতন্ত্র রয়েছে।