প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, যেখানে বিশ্বের অনেকগুলো দেশ অংশগ্রহণ করেছিল তার কারণ কখনও ক্ষুদ্র একটি ঘটনা হতে পারে না। তবে হ্যাঁ। যুদ্ধের সূচনা সামান্য একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে হবে এটাই স্বাভাবিক। প্রথমে চলুন সে ঘটনাটি জেনে নেই।
বর্তমানে অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরি দুটি দেশ। তবে পূর্বে এমনটি ছিল না। ১৮৬৬ সালে অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরি এক হয়ে যায়। অপরদিকে বর্তমানে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা একটি রাষ্ট্র। কিন্তু পূর্বে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা রাষ্ট্র দুটি আলাদা ছিল। ১ম বিশ্বযুদ্ধের সূচনালগ্নে অর্থাৎ ১৯১৪ সালে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির সম্রাট ছিলেন ফ্রান্সিস জোসেফ। ১৯০৮ সালে সম্রাট ফ্রান্সিস জোসেফ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা দখল করে নেয়। কিন্তু বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার জনগণ এতে মোটেই সন্তুষ্ট হয়নি। তারা ধীরে ধীরে বিদ্রোহ করতে থাকে। এই সূত্র ধরে পাশের রাজ্য সার্বিয়ার সাথেও অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির বৈরী সম্পর্কের সূচনা হয়। জাতীয়তাবাদী সার্বিয়ারাও অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে “ব্ল্যাক হ্যান্ড” নামক গুপ্ত বাহিনী গঠন করে।
১৯১৪ সালের ২৮শে জুন। অস্ট্রিয়ার ৫০ বছর বয়সী যুবরাজ ফ্রেঞ্জ ফার্ডিন্যান্ড এক রাষ্ট্রীয় কাজে বসনিয়ার রাজধানী সারায়াভো শহরে যান। সেখানে একদল বিদ্রোহী তাদের আক্রমণ করে। এলাপাথারি গুলির একটি ফার্ডিন্যান্ড এর গলায় এবং একটি তার স্ত্রীর পেটে গিয়ে লাগে। দুজনেই মারা যান। তদন্ত করে জানা যায় যে আক্রমণকারী ১৯ বছর বয়সী তরুন গ্যাব্রিলো প্রিন্সিপো সার্বিয়ার অধিবাসী।
অস্ট্রিয়ার সম্রাট ফ্রান্সিস জোসেফ বিষয়টিকে নিয়তি ভেবে হয়ত মেনে নিতেন। কিন্তু তার মন্ত্রী ও সেনাপতি বিষয়টিকে সুযোগ মনে করে সার্বিয়াকে দখল করার পরিকল্পনা করে। তাদের পরামর্শে ক্ষতিপূরণ হিসাবে সম্রাট ২৩শে জুলাই ১০ দাবি সংবলিত একটি পত্র পাঠায় সার্বিয়াকে। সার্বিয়া ৮টি দাবি মেনে নিতে সম্মত হয়। কিন্তু তাদের দেশের শাসনতন্ত্রের অবমাননার জন্য শেষ দুটি দাবি মানতে অসম্মত হন। এজন্য তারা ক্ষমাও চেয়ে নেয়। কিন্তু সম্রাট সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তিনি যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন।
২৮শে জুলাই ১৯১৪, ট্যাঙ্কের মাধ্যমে সার্বিয়ার সীমান্তে গোলাবর্ষণ করে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি।
সূচনা হয় যুদ্ধের।