মানুষের ইতিহাস
বিখ্যাত লেখক ইউভাল নোয়া হারারির সেপিয়েন্স বই অনুযায়ী, যদি আপনাকে ২০ লক্ষ বছর পূর্বে আফ্রিকার কোনো এক জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয় তবে আপনি নিশ্চয়ই অবাক হবেন আপনার স্বজাতিদের দেখে।
- কেউ কথা বলতে পারে না;
- শরীরে কোন কাপড় নেই;
- কোন সমাজ নেই;
- কোনো নিয়ম নেই;
- আর সবচেয়ে বড় কথা তারা জটিল চিন্তাই করতে পারে না।
অর্থাৎ জীবজগতের অন্য প্রাণীদের সাথে মানুষের তেমন কোনো পার্থক্য তখন ছিল না। আনুমানিক ৭০ হাজার বছর পূর্বে মানুষ সংস্কৃতি নামের কোনো একটা কিছু গড়ে তোলে। আর সেই সংস্কৃতির পরিবর্তন হতে হতে নিতান্তই সাধারণ একটা জীব মানুষ বর্তমানে সৃষ্টির সেরা জীবে পরিণত হয়েছে। তো
- সংস্কৃতি কী?
- কেন কেবল মানুষই সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পেরেছে? অন্য প্রাণীরা নয়!
- কীভাবে সংস্কৃতির পরিবর্তন হয়েছে?
- কখন পরিবর্তন হয়েছে?
- কীভাবে সভ্যতার জন্ম হয়েছে?
- গড়ে উঠেছে গ্রাম, নগর, রাষ্ট্র
অর্থাৎ
- অসভ্য বন্য মানুষ কীভাবে সভ্য মানুষে পরিণত হয়েছে?
উৎসুক মনে কখনো না কখনো এরূপ প্রশ্ন নিশ্চয়ই উঁকি দিয়েছে। এই সিরিজে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে আমরা মানুষের অস্তিত্বের পর থেকে সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে উঠা পর্যন্ত দীর্ঘ, জটিল অথচ চমৎকার ইতিহাস আলোচনা করব। এই ইতিহাস আমাদের পূর্ব পুরুষদের ইতিহাস, এই ইতিহাস “মানুষের ইতিহাস”।
আলোচনার সুবিধার্থে মানুষের সুদীর্ঘ এই ইতিহাসকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
তবে মনে রাখা প্রয়োজন মানুষের এই ইতিহাস অলিখিত ইতিহাস। লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার না হওয়ায় এই ইতিহাস কেউ লিখে রখেনি। বিজ্ঞানীরা
- জীবাশ্ম
- প্রত্নতত্ত্ব
- জিন ও
- ভাষা নিয়ে গবেষণা করে এই ইতিহাস আবিষ্কার করেছে।
এবার চলুন শুরু করা যাক।
কেমন ছিল পৃথিবীর প্রথম মানুষ
আজ থেকে আড়াই লক্ষ বছর আগের কথা। বর্তমান ৮০০ কোটির বেশি মানুষের পৃথিবীতে তখন কেবল আফ্রিকায় গুটি কয়েক মানুষ বসবাস করতো। এছাড়া বাকি পৃথিবীতে কিছু
শিকারী সমাজের বর্ণনা
আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি আগুনের ব্যবহার মানুষের মস্তিষ্কের আয়তন বৃদ্ধি করে। ফলে মানুষ জীবজগতের একমাত্র প্রাণী হিসেবে জটিল চিন্তা তথা কল্পনা করার ক্ষমতা লাভ করে। আবিষ্কার
পৃথিবীর প্রথম সভ্য সমাজ: কৃষি সমাজের বর্ণনা
আড়াই লক্ষ বছর পূর্বে মানুষের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল ৭০ হাজার বছর পূর্বে তা প্রাণীজগতের অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা হয়ে ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। মানুষ
যা হউক কৃষিবিপ্লবের ফলে মানব সমাজ খুব দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে। নদীর তীরে উর্বর ভূমির আশেপাশে মানুষ বসবাস করতে শুরু করে। ফসলের সংখ্যা বাড়ে। খাদ্যের নিশ্চয়তা জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে। বেশ কিছু পরিবার মিলে গঠিত হয় গ্রাম। বাণিজ্য বেড়ে সৃষ্টি হয় নগর। একে অন্যের সাথে অভিজ্ঞতা শেয়ার করে। অর্থাৎ সংস্কৃতি উন্নততর হয়।
সংস্কৃতির উন্নতির অবস্থাকে আমরা বলি সভ্যতা। আর সংস্কৃতির পরিবর্তনের গল্পকে বলি ইতিহাস। অর্থাৎ মানুষ গড়ে তুলে সভ্যতা; পদার্পণ করে নতুন ইতিহাসের যুগে।
পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা সভ্য মানুষদের সংস্কৃতি তথা জীবনযাত্রা ছিল বিভিন্ন রকম। যেমন মিশরের লোকদের খাদ্যাভ্যাস, বিশ্বাস, রীতি-নীতি ভারতের লোকেদের থেকে ভিন্ন ছিল। তাই ভিন্ন ভিন্ন স্থানে থাকা সভ্যতার বৈশিষ্ট্য ও নাম ভিন্ন ভিন্ন হয়। সাধারণত নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠত এই সভ্যতা। কারণ নদী তীরবর্তী ভূমি ছিল চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত স্থান। আর সভ্যতার নামকরণ করা হয় নদী বা স্থানের নাম অনুসারে।
যেমন:
মধ্যপ্রাচ্যের ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা সভ্যতার নাম মেসোপটেমিয়া সভ্যতা;
ভারতীয় উপমহাদেশের সিন্ধু নদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা সভ্যতাকে বলা হয় সিন্ধু সভ্যতা;
মিশরের নীল নদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা সভ্যতাকে বলা হয় মিশরীয় সভ্যতা ইত্যাদি। পরবর্তী সিরিজে সেসব সভ্যতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আগ্রহীদের সেই সিরিজ দেখার আমন্ত্রণ রইল।